জি এম রিয়াজুল আকবর কয়রা খুলনা থেকেঃ
২ বছর বয়সে পিতা মারা যায় আমরা ৭ ভাই বোন মা মাটির কাজ করে, অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে আমাদের সংসার চালাতো। আমার বয়স ১৪ বছর হলে আমাকে কয়রা উপজেলার হড্ডা গ্রামের মোঃ জহুরুল হকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। শসুর বাড়িতে এসে দেখি ছোট্ট একটা কুড়ি ঘর, চাচ দিয়ে বেড়া, গোলপাতার সাউনি।সংসারে শসুর, শাসুরী, ও ননোদ ছিলো স্বামীর একমাএ আয় ছিলো নদীতে জাল টানা দিয়ে মাছের পোনা ধরে বিএি করে সংসার চালানো । বিয়ের ১ বছর পরে কোল আলোকিত করে আসে একটি কন্যা সন্তান স্বামীর সল্পআয়ে সংসার মোটামুটি চলতো। মেয়েটার বয়স ৫ বছর হলে আমিও আমার স্বামীর সাথে নদীতে যেয়ে মাছ ধরা শুধু করি।
কাক ডাকা ভোরের আগে উঠে,স্বামীর সাথে গিয়ে ২ জন মিলে নদীতে জাল টানা দিতাম। তাতে যা আয় হতো মোটামুটি আমাদের সংসার চলতো । ১ ম সন্তান হওয়ার ৫ বছরের মাথায় এসে কোল আলোকিত করে একটা পুএ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তখন নদীতে আমি আর যেতে পারতাম না।
স্বামী একা একা জাল টাকা দিতো। সন্তান হওয়ার ৪/৫ বছরের মাথায় এসে আবারও স্বামীর সাথে নদীতে গিয়ে জাল টাকা দিতে থাকি। তীব্র, রোদ্র,ঝড়,বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা মাথায় নিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবন যাপন করতাম। অভাবের সংসারে ১৭ বছর বয়স হলে ছেলেটাকে মরনব্যাধী হিষ্টরি রোগে আক্রান্ত হয়। রোগ চাপ দিলে ছেলেটার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তখন মনে হয় আর ছেলেটা বাচবে না। তাকে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। গ্রাম বাসীর কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে মেয়েটাকে বিবাহ দিয়ে দিয়েছি। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপ নগর গ্রামের ফজর আলী ফকিরের বড় পুএ আঃ হাসান ফকিরের সাথে। মেয়ের বিয়ের ৭ বছরের পর স্বামী টা অসুস্থ হয়ে। তখন তিনি আর কোনো কিছু করতে পারে না । প্রতিদিন তার ঔষধ কিনতে হয়, তখন সংসারে অভাব দেখা দেয় অনাহারে থাকতে হতো।
কোন কাজ না পেয়ে আমাকে ও স্বামীর পেশা টা বেছে নিতে হয়।
কাক ডাকা ভোরের আগে উঠে অসুস্থ স্বামীকে হাত ধরে নিয়ে বাড়ির সামনে নদীতে নৌকায় তুলে মাছ ধরি। আমি মহিলা মানুষ তিনি আমার সাথে নৌকায় থাকলে আমার সাহস হয়। কেউ আর আমাকে কোনো খতি করতে পারবে না। নৌকায় উঠে প্রথমে জ্বাল ফেলায় তারপর কোমরের উপরের পানিতে নেমে বাম হাত দিয়ে নৌকা ধরি।আর ডান হাত দিয়ে জাল ধরি। প্রচুর কষ্ট হয় মনে হয় হাত ভেঙে যাচ্ছে। সেই মাছ বিএি করে সংসারের চাউল, বাজারের করি। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে
তখন আর কোন আয় থাকে না অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে পেটে ভাতে খেতে হয়। তখন সংসারে সবার ২ বেলা ভাত জুটে না। আমরা মারা গিলে মাটী দেওয়ার মতো জায়গা ও আমাদের নেই। এসব কথা বলেন হড্ডা গ্রামের মোঃ জহুরুল হক গাজীর স্ত্রী জাহানারা বেগম ( ৩৯)
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি হড্ডা গ্রামের শালুক খালী গেটের পার্শ্ববর্তী জায়গায় ওয়াবদার স্বলপে ১ টি ঘরে ছেলে,শাসুরী ও তারা বসবাস করছেন।
স্থানীয় ইউ পি সদস্যা চায়না মন্ডল দৈনিক উপকূলীয় বার্তাকে বলেন, ঐ এলাকায় মানুষ আর্থিক সংকটে জীবন যাপন করে, কেউ নদীতে মাছ ধরে, কেউ সুন্দরবনে যায়,কেউ ইটের ভাটায় যেয়ে কাজ করে, কেউ দীনমুজুর কাজ করে, সুন্দরবন বন্ধ থাকলে জেলেদের মাঝে খুব কষ্ট হয়ে যায়। তখন অনেক জেলেরা অনাহারেও জীবন যাপন করেন।
Leave a Reply